কক্সবাজারের পাশেই বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী । Moheshkhali । Cox’s bazar

আদিনাথের গোড়াপত্তন কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে ত্রেতাযুগে। এর একটি ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, রামায়ণ, পুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়। ত্রেতাযুগে রাম-রাবণের যুদ্ধের কথা ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। রাবণ লঙ্কা যুদ্ধে রামের সঙ্গে জয়লাভের জন্য দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে অমরত্ব বর প্রার্থনা করেন। মহাদেব এসময় কৈলাসে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। তিনি রাবণের আরধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে অভীষ্ট সাধনে বর দান করেন এবং শর্ত দেন শিবরূপী উর্ধমুখী শিবলিঙ্গ কে কৈলাস হতে বহন করে লঙ্কায় নিয়ে যেতে হবে এবং পথিমধ্যে কোথাও রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তবে মহাদেব সেই স্থানেই অবস্থান নেবেন এবং রাবণের অভীষ্ট সাধন হবেনা। শর্তানুসারে রাবণ শিবলিঙ্গ বহন করে লঙ্কার উদ্দেশ্য গমন করেন তবে পথিমধ্যে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে বর্তমান মহেশখালীর মৈনাক পর্বতে থামতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে শর্তানুসারে রাবণ শিবলিঙ্গ পূনরায় উঠাতে ব্যর্থ হন এবং মহাদেব এই মৈনাক শিখরেই অবস্থান গ্রহণ করেন। শ্রী শ্রী আদিনাথ এর আবিস্কার সর্ম্পকে স্থানীয়ভাবে একটি জনশ্রুতি রয়েছে। এলাকাবাসীর মতানুসারে এই তীর্থ আবিস্কৃত এবং মর্যাদা পায় নূর মোহাম্মদ শিকদার নামক একজন সচ্ছল মুসলিম ধর্মালম্বীর মাধ্যমে। তিনি লক্ষ্য করেন তার একটি গাভী হঠাৎ দুগ্ধদান বন্ধ করে। এ ঘটনায় তিনি রাখালের উপর সন্ধিহান হন। রাখাল বিষয়টির কারণ অণুসন্ধানে রাত্রি বেলায় গোয়ালঘরে গাভীটিকে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেখতে পায় গাভীটি গোয়ালঘর হতে বের হয়ে একটি কাল পাথরের উপর দাড়ায় এবং গাভীর স্তন হতে আপনা আপনি ঐ পাথরে দুধ পড়তে থাকে। দুধ পড়া শেষ হলে গাভীটি পূনরায় গোয়ালঘরে চলে যায়। রাখাল বিষয়টি নূর মোহাম্মদ শিকদার কে জানালে তিনি গুরুত্ব না দিয়ে গাভীটি বড় মহেশখালী নামক স্থানে সরিয়ে রাখেন। একদিন শিকদার স্বপ্নাদেশ পান গাভীটিকে সরিয়ে রাখলেও তার দুধ দেওয়া বন্ধ হবে না বরং সেখানে তাকে একটি মন্দির নির্মাণ ও হিন্দু জমিদারদের পুজোদানের বিষয়ে বলতে হবে। স্বপ্নানুসারে শিকদার সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের মতানুসারে আদিনাথ মন্দিরই একমাত্র মন্দির যা, মুসলিম ধর্মালম্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।

মৈনাক শিখরেই আদিনাথ মন্দিরের পাশে অষ্টাভূজারূপী দেবী দুর্গার একটি মন্দির রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে নূর মোহাম্মদ শিকদারই অষ্টাভূজাকে সদূর নেপাল থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নাদেশ পান। পরবর্তীতে নাগা সন্ন্যাসী নামক একজন সাধক ১৬১২ সালে নেপালের ষ্টেট মন্দির থেকে অষ্টাভূজাকে চুরি করে আনার সময় ধরা পড়ে জেলবণ্দি ও বিচারের সম্মুখীন হন। বিচারের পূর্ব রাত্রিতে সন্ন্যাসী যোগমায়াবলে মহাদেবের কৃপা সান্নিধ্য লাভ করেন। মহাদেব অভয় বাণী প্রদান করেন এবং বিচারকের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইচ্ছামোতাবেক উত্তর দিতে বলেন। পরের দিন বিচারকালে বিচারক প্রথমে নেপালের রাজা এর নিকট মূর্তির রং জানতে চাইলে রাজা কষ্টি পাথরের মূর্তি কাল রং বলে বর্ণনা দেন। একই প্রশ্ন সন্ন্যাসীকে করা হলে তিনি মূর্তির রং সাদা বলেন। পরবর্তীতে মূর্তি সকলের সম্মুখে উন্মোচন করে সাদা দেখা যায় এবং সন্ন্যাসীর পক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। রাজা প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব হলে সন্ন্যাসী তাকে বিস্তারিত বলেন। পরবর্তীতে রাজা যথাযথ মর্যাদার সহিত মৈনাক শিখরে শ্রী শ্রী আদিনাথ এর পাশে মন্দির নির্মাণ করে অষ্টভূজাকে প্রতিষ্ঠান করেন। মন্দির কমিটির তত্ত্বাবধায়কের মতে এখনও নেপাল সরকার মাঝে মধ্যে মন্দিরে যথাসাধ্য অণুদান দিয়ে থাকেন। মূল আদিনাথ ও অষ্টাভূজা মন্দিরের পাশেই ভৈরব ও রাধা গোবিন্দ এর মন্দির রয়েছে।

Categories Travel & Events
Tags
Comments (0)
Add Comment